মুখ্যমন্ত্রীর দরবার 

ইউনানী কলেজের দূর্দশা মোচনের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে খোলা চিঠি লিখলেন আন্দোলনরত এক অধ্যাপক

শেয়ার করুন

ইউনানি মেডিকেল কলেজ অধিগ্রহন বিল বিধানসভায় বামেদের আমলে পাশ হয় । সময়ের বিচারে ১২ বছর অতিবাহিত হযে গেছে । এখনও রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতের একমাত্র ঐতিহ্যবাহী ইউনানি মেডিকেল কলেজকে সরকার অধিগ্রহন করেনি । এর ফলে বন্ধ হতে বসেছে এই কলেজটি । ছাত্র-ছাত্রী ,শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীরা আন্দোলন শুরু করেছে । কয়েক সপ্তাহ ধরে সেই আন্দোলন চলছে । কোনো হেলদোল নেই সরকারের । এমতাবস্থায় ওই কলেজকে অধিগ্রহনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য রাজ্যের মানবিক মুখ্যমন্ত্রীকে খোলা চিঠি লিখেছেন আন্দোলনরত ওই কলেজের এক অধ্যাপক । তা আমরা গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করছি ।

মধ্য কলকাতার খুব নামকরা জায়গা হলো তালতলা।এই তালতলার আব্দুল হালিম লেনে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী দ ক্যালকাটা ইউনানী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। এই কলেজ শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয় বরং উত্তর পূর্ব ভারতের একমাত্র ইউনানী মেডিক্যাল কলেজ। ১৯৯৪ সালে এই কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়।প্রথমে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও পরে পশ্চিমবঙ্গ হেল্থ ইউনিভার্সিটি থেকে এফিলিয়েশন পাই।প্রত্যেক বছরে ৪০ জন করে ছাত্র ভর্তি হয় ।প্রথম থেকেই এই কলেজের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না।তৎকালীন গভর্নিং বডি প্রেসিডেন্ট ও প্রিন্সিপাল স্বর্গীয় হাকিম সৈয়দ ফাইজান আহমেদ সাহেব অনেক কষ্ট করে এই কলেজটিকে সুষ্ট্য ভাবে পরিচালনা করছিলেন।কিন্তু একটা সময় এমন এসে যায় যে এই কলেজটিকে চালনা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।তাই তিনি তৎকালীন সরকারের কাছে অনুরোধ করেন যে কলেজটিকে অধিগ্রহণ করার জন্য। তারপর ২০০৯ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় একটা বিল আনা হয়।এবং ২০১০ সালে স্ট্যান্ডিং কমিটি থেকে পাশ হওয়ার পর বিধানসভায় বিলটিকে পাশ করানো হয়। প্রসঙ্গত মনে করিয়ে দিতে চাই ওই একই দিনে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় আর ও একটি বিল পাশ হয়েছিল।আর সেটি হলো প্রেসিডেন্সি কলেজটিকে বিশ্ববিদ্যালয় করার।তার ঠিক দু এক মাসের মধ্যে প্রেসিডেন্সি কলেজের বিলটি আইনে পরিণত হয়।আর এই ইউনানী কলেজের বিলটিতে মহামান্য রাজ্যপালের সই করেন।এবং দিল্লী পাঠানো হয় রাষ্ট্রপতির সই এর জন্য। সময় পার হয়ে যায়।আর এদিকে পশ্চিমবঙ্গে সরকারে পরিবর্তন হয়ে যায়। আসে মা মাটি মানুষের সরকার।যে সরকার ব্রত নেয় যে আমরা গরীবের সরকার। আমরা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য কে ঢেলে সাজানোর দায় নিলাম।যাতে আর কেউ অন্য রাজ্যে পড়তে বা চিকিৎসা করতে না যায়।দিনের পর দিন মাসের পর মাস আর বছরের পর বছর পার হতে হতে ১০বছর অতিক্রম হয়ে গেল।আমরা যেখানে ছিলাম তার থেকে আরও খারাপ অবস্থায় এসে গিয়েছি। আজ এই কলেজে কর্মরত শিক্ষা কর্মীদের ছেলেমেয়েদের স্কুলের ফিস না দিতে পারার জন্য নাম কেটে দেবার উপক্রম।৬মাস মাইনে না পাবার জন্য খাবার ও ঠিক মত জোটেনা।

Advertisement

তাই আমরা জনদরদী দিদির কাছে দুই হাত জড়ো করে পার্থনা করছি দিদি আমাদের ও আমাদের পরিবারকে বাঁচান।আমাদের ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যত আপনার হাতে।বিভিন্ন সময়ে এই কলেজ অনেক নেতা ও মন্ত্রী এসেছেন , যেমন ডাক্তার নির্মল মাঝি,আশীষ ব্যানার্জী মহাশয়,মাননীয় সাংসদ শ্রী সুদীপ ব্যানার্জী, বিধায়ক জনাব ইদ্রিস আলী ,শ্রীমতী নয়না ব্যানার্জীও আরও অনেকে।প্রত্যেকে শুধু মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছেন। আমরা স্বাস্থ্য ভবন ,নবান্ন সব জায়গায় বহুবার চিঠী দিয়েছি,বহুবার মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে নিবেদন করেছি ,কিন্তু কোনও সুফল পায়নি।তাই বাধ্য হয়ে আমরা আজ রাস্তায় বসেছি।আমরা এখনো জানিনা কি কারণে এই কলেজটিকে অধিগ্রহণ করা হচ্ছে না।এই অতিমারির সময়েও আমরা হসপিটাল চালিয়ে গিয়েছি।এবং আজ ৯দিন স্ট্রাইক চললেও আমরা রুগী পরিষেবা দিয়ে যাচ্ছি।প্রত্যেক দিন ৪০০ এর বেশি রুগী পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চিকিৎসা করাতে আসে।তাদের আমরা কোনও অসুবিধায় ফেলিনি।এই কলেজে অত্যাধুনিক ল্যাব আছে ,যেখানে একদম সস্তায় রক্ত,পায়খানা,প্রসাব,থুতুর পরীক্ষা করা হয়।খুবই স্বল্প খরচে x-ray করা হয়।শুধু তাই নয় সামান্য পয়সার বিনিময়ে এক সপ্তাহের ঔষধ দেওয়া হয়ে থাকে।

দিদি স্বর্গীয় ফায়জান সাহেব অনেক স্বপ্ন নিয়ে এই কলেজ বানিয়েছিলেন,ওনার স্বপ্ন ছিল এই কলেজ সরকারি হবে,গরীব ছেলেমেয়ে এখানে পড়াশোনা করবে,সাধারণ মানুষ চিকিৎসা করাবে,এখানে এম ডি,এম এস পড়ানো হবে।এই মহান ব্যক্তি স্বপ্ন দেখতে দেখতেই পৃথিবী থেকে চলে গেলেন।আমরা চাই ওই আইরন ম্যান অফ ইউনানী এর স্বপ্ন যেনো পূরণ হয়। দিদির কাছে আমাদের একান্ত নিবেদন দয়া করে এই কলেজটিকে অধিগ্রহণ করুন। ও আমাদের বাঁচান।শুধু তাই নয় ইউনানী পাথি কে বাঁচিয়ে রাখুন।

পশ্চিমবঙ্গে সব প্যাথির সরকারি কলেজ আছে ,নেই শুধু ইউনানী কলেজ।দিদি এই কলেজটিকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অধিগ্রহণ করে আমাদের মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচান।যতদিন না এই কলেজ সরকারি হবে আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো।এবং পরবর্তী সময়ে আন্দোলন আরও জোরদার হবে, আমরা আমরণ অনশন করবো।দিদি আমরা জানি আমাদের আর কেউ নেই,আছেন শুধু আপনি।তাই আপনার মমতা ভরা আশীর্বাদের হাত আমাদের দিকে বাড়িয়ে দিন।আমাদের বাঁচান।ইউনানীকে বাঁচান।


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ